ফিফায় নতুন সভাপতি

মধ্যপ্রাচ্যের অবস্থা সঙ্গীন হলেও এবার এই বিস্ফোরণমুখ অঞ্চল থেকে দুইজন ফিফার প্রেসিডেন্ট পদে লড়েছিলেন। এদের একজন জর্দানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহর বৈমাত্রেয় ভাই শাহজাদা আলী বিন হোসেন, এবং অপরজন বাহরাইনের শেখ সালমান বিন ইবরাহীম আল খলিফা। ইনি বাহরাইনের সুন্নি আল খলিফা রাজবংশের লোক। উভয়েই ফিফার অন্যতম ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কার্যরত।

শুক্রবার বাংলার সময় রাতে জুরিখে আয়োজিত ফিফার বিশেষ কংগ্রেসে এই দুই ধনকুবেরকেই পরাজিত করে বৈশ্বিক ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান হয়েছেন জায়ানি ইনফ্যান্টিনো।

টাকার গরমে ধরাকে সরা জ্ঞান করার একটা নজির হয়ে থাকবে এই দুই আরবের পরাজয়। বিশেষত প্রিন্স আলী অনেক চেষ্টাই করেছিলেন। গত বছর পুনঃনির্বাচিত হয়েও হাটে দুর্নীতির হাঁড়ি ভেঙ্গে সেপ ব্লাটারের কপাল পোড়ার পেছনে প্রিন্স আলীর ভূমিকাকেও সন্দেহ করা যায়।

যাহোক, টাকার গরমে আলী বিন হোসেন আর শেখ সালমান ভুলে গেছিলেন যে ফিফা আজো ক্ষয়িষ্ণু ইউরোপীয় জাত্যাভিমানের একটি ধারক। আজ পর্যন্ত ব্রাজিলের জোয়াঁ হ্যাভেলাঞ্জ ছাড়া সব ফিফা প্রেসিডেন্টই হয়েছেন ইউরোপ থেকে। এই ধরণের ছুপা বর্ণবাদকে খুব স্টাইলের (অর্থাৎ নির্জলা হঠকারীতা ও মোনাফেকি) সাথে বর্ণচোরা করা হয়।

ভারতীয়দের মধ্যে যেমন নিজের দেশে বিজেপিকে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় গদিতে বসিয়ে বাংলায় জামায়াতে ইসলামীর উত্থানে অসাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতা চলে যাবার রব তোলার দস্তুর দেখা যায়, ফিফার বর্ণবাদও অনেকটা এমনই ধারায় ক্রিয়াশীল। তবে গত অক্টোবর থেকে ক্যামেরুনের ঈসা হায়াতু সেপ ব্লাটারের ইস্তিফাজনিত শূন্যতায় ফিফার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ছিলেন, যিনি এমনিতে ফিফার জ্যেষ্ঠ সহসভাপতির দায়িত্বে আছেন।

খেয়াল করার মতো বিষয় হচ্ছে, যতো টাকাই ঢালা হোক না কেন, ইউরোপীয়রা আরবদের কাছ থেকে নিঃসংকোচে যতো মোটা অংকের উৎকোচই নিক না কেন, কোন আরবের পক্ষে ফিফার প্রেসিডেন্ট হওয়া দৃশ্যত মুশকিল। টাকা ছড়িয়ে এরা বড়জোর সহসভাপতির পদই পেতে পারে। এবার মিলিয়ে মোট তিনবার আরব ধনকুবেরদের ফিফার সভাপতি হবার খায়েশ ভূলুণ্ঠিত হয়েছে।

প্রথমবার ব্যর্থ হন ২০০২ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত এশীয় ফুটবল ফেডারেশনের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করা কাতারের মোহাম্মদ বিন হাম্মাম। ২০১১ সালের ফিফা সভাপতি নির্বাচনে তিনি সেপ ব্লাটারের প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছিলেন।

সেই সময় অথবা তার কিছু আগে আব্বা বাফুফের একজন সদস্য ছিলেন। মোহাম্মদ বিন হাম্মাম সেই নির্বাচনে বাংলাদেশ সহ অনেক আফ্রো-এশীয় দেশের সমর্থন নিয়েও সেপ ব্লাটারকে হারাতে পারেননি। ২০০৫ সালে ফিফা সভাপতি পদে অগ্রবর্তী নির্বাচনী প্রচারণার সিলসিলায় ঢাকায় এসে বাফুফের সদস্যদের বাফুফের লোগো আঁটা ২২ ক্যারট স্বর্ণে মাখানো হাতঘড়ি দিয়েছিলেন হাম্মাম। এএফসির প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাংলাদেশের জন্য বাড়তি কিছু অর্থিক ও অবকাঠামোগত প্রণোদনাও মঞ্জুর করেছিলেন তিনি।

তবে ২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট পদে সেপ ব্লাটারের কাছে হেরে চড়া মাশুল দেন মোহাম্মদ বিন হাম্মাম। দুর্নীতির অভিযোগে তাকে আজীবনের জন্য ফুটবল থেকে বরখাস্ত করে ফিফা। ভাবখানা যেন এমন ছিলো, বেচারা হাম্মাম বামন হয়ে চাঁদ স্পর্শ করার গোস্তাখি করেছিলেন…!